Search
Close this search box.

ফিজিওথেরাপি কেন দেওয়া হয় ?

ফিজিওথেরাপি কেন দেওয়া হয়

ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা ও প্রতিরোধের জন্য। ফিজিওথেরাপি হলো চিকিৎসার একটি শাখা যা শারীরিক ব্যায়াম, ইলেকট্রোথেরাপি, ম্যানুয়াল থেরাপি, এবং অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করে শরীরের স্বাভাবিক গতিবিধি ও কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করে।

আমরা যদি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের কথা চিন্তা করি তা হলে দেখতে পাব- শুধু ওষুধ সব রোগের পরিপূর্ণ সুস্থতা দিতে পারে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি অপারেশনের প্রয়োজন হয়। তেমনি কিছু কিছু রোগে ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে যেসব রোগের উৎস বিভিন্ন মেকানিক্যাল সমস্যা ও ডিজেনারেটিভ বা বয়সজনিত সমস্যা, সেসব ক্ষেত্রে ওষুধের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম।

বর্তমান সময়ে অনেক মানুষ রয়েছেন যাদের শারীরিক সমস্যার কারণে ফিজিওথেরাপি নিয়ে থাকেন। সাধারণত কারো শরীরে যদি বাত ব্যথা অথবা কোমর ব্যথা থাকে তাহলে সেটার জন্য এই ফিজিওথেরাপি নেওয়া যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় যেকোনো অসুখের সমস্যার সমাধানের জন্য এ ধরনের অসুখের ক্ষেত্রে পেইনকিলার প্রদান করা হয়ে থাকে। কিন্তু আঘাতজনিত ব্যাথা অথবা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার পরিবর্তন অথবা আরাম পাওয়ার জন্য ফিজিওথেরাপি বর্তমান সময়ে একটি পরীক্ষিত চিকিৎসা পদ্ধতি।

অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা দূর করার জন্য অথবা শরীরের বিভিন্ন স্থান যেগুলো অবশ হয়ে পড়ে রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য এই ফিজিওথেরাপি প্রদান করা হয়ে থাকে।

চলুন জেনে নিই ফিজিওথেরাপি কখন দেয়া হয়

ফিজিওথেরাপির জন্য শরীরে কোন ওষুধ প্রয়োগ না করে এক ধরনের ব্যায়াম অথবা এক ধরনের শারীরিক কষ্টের মাধ্যমে করা হবে বলে অনেকেই ভয় পেতে পারে। তাছাড়া কোন একজন মানুষ ফিজিওথেরাপি নিয়েছে তার মুখের বর্ণনা শুনে থেরাপি নেয়া বাদ দিলে ভুল করবে। কারণ একজন রোগীর বর্ণনা থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ের উপরে নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি ট্রিটমেন্ট প্রদান করা হয়ে থাকে।

যেমন বাত-ব্যথা, স্পোর্টস ইনজুরি, হাড়ের ক্ষয়জনিত ব্যাথা, সারভাইক্যাল ও লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস, ডিস্ক প্রলেপস, অষ্টিও-আরথ্রাইটিস, ফ্রোজেন সোল্ডার বা জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, প্লাস্টার বা অপারেশন পরবর্তী জয়েন্ট স্টিফনেসস, স্ট্রোকজনিত প্যারালাইসিস, ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস বা বেলস পালসি, সেরেব্রাল পালসি বা সিপি বাচ্চা ইত্যাদি।

১. স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যায়

স্ট্রোক, আঘাত অথবা শল্যচিকিৎসায় স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতায় ভুগে পঙ্গুত্ব বরণ করে অনেকে। এ ধরনের রোগীর শরীর অবশ হয়ে যায় বা মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। এসব রোগীর শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ানো এবং অস্থিসন্ধি সচল রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। এদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম করে তুলতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।

২. মাংসপেশি ও হাড়ের সমস্যায়

ভেঙে যাওয়া হাড় জোড়া লাগার পর আঘাতপ্রাপ্ত অংশের মাংসপেশি ও হাড় ঠিকমতো কাজ করতে সময় নেয়। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন। এ ছাড়া নানা ধরনের বাত যেমন স্পন্ডিলাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, স্পন্ডিলিস্থেসিস; অর্থাৎ ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগছেন যাঁরা, তাঁদেরও এই চিকিৎসা প্রয়োজন। পাশাপাশি অস্থিসন্ধির বাত, হাঁটুর ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধে ব্যথা এবং পায়ের গোড়ালির সমস্যায় আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি দিতে হয়।

৩. পোড়া রোগীদের জন্য

পোড়া রোগীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে মাংসপেশির সংকোচনের কারণে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণের আশঙ্কা থাকে। এই ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন ফিজিওথেরাপি।

৪. শিশুরোগের ক্ষেত্রে

জন্মগতভাবে যেসব শিশু প্যারালাইসিস বা সেরিব্রাল পালসি ও মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত, তাদের ফিজিওথেরাপি দিতে হয়। এ ছাড়া শিশুদের ঘাড়, হাত, পা বেঁকে যাওয়া ঠিক করতেও এই চিকিৎসার বিকল্প নেই।

৫. হৃদরোগ ও ফুসফুসের সমস্যায়

বুকে কফ জমা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের এই চিকিৎসা প্রয়োজন। এ ছাড়া হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে রোগীর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা ঠিক রাখতে ফিজিওথেরাপি দিতে হয়। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) রোগীদেরও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়।

৬. শল্যচিকিৎসায়

সাধারণত অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়। তাই রোগীকে সঠিকভাবে চলাফেরায় সক্ষম করে তুলতে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়।

৭. বার্ধক্যজনিত সমস্যা

বার্ধক্যে শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা ও মাংসপেশিতে ক্ষয়ের কারণে প্রবীণ ব্যক্তিরা চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এসব মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা বজায় রাখতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।

৮. পঙ্গু পুনর্বাসন

দুর্ঘটনার কারণে হাত-পা হারানো ব্যক্তির কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের প্রয়োজন হয়। এসব মানুষের চলাফেরা স্বাভাবিক করতে ফিজিওথেরাপি একমাত্র পুনর্বাসন পদ্ধতি।

Share the Post:

Related Posts

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার ফলে সৃষ্টি হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে

Read More