Search
Close this search box.

ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ?

ঘাড় ব্যথা একটি অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এটি তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং সহজেই চিকিৎসা করা যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, ঘাড় ব্যথা গুরুতর চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

আমাদের বেশীর ভাগ মানুষই জীবনের কোনো এক সময় ঘাড়ের ব্যথায় ভোগেন। মেরুদণ্ডের ঘাড়ের অংশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সারভাইক্যাল স্পাইন বলে। মেরুদণ্ডের ওপরের সাতটি কশেরুকা ও দুই কশেরুকার মাঝখানের ডিস্ক এবং হাড়ের আশেপাশে মাংষ পেশি ও লিগামেন্ট নিয়ে সারভাইক্যাল স্পাইন বা ঘাড় গঠিত। মাথার হাড় (স্কাল) থেকে মেরুদণ্ডের সপ্তম কশেরুকা পর্যন্ত ঘাড় বিস্তৃত। আট জোড়া সারভাইক্যাল স্পাইন নার্ভ (স্নায়ু) ঘাড়, কাঁধ, বাহু, কনুই, ফোর আর্ম (নিচু বাহু) এবং হাত ও আঙুলের চামড়ার অনুভূতি ও পেশির মুভমেন্ট প্রদান করে। এ জন্য ঘাড়ের সমস্যায় রোগী ঘাড়, কাঁধ, বাহু ও হাত বা শুধু হাতের বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ঘাড়ের সমস্যা পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি হয়।

ঘাড় ব্যথার কারণ প্রতিকার ও চিকিৎসা, physical healing point

ঘাড়ে দুই ধরনের ব্যথা হয়ঃ 
১) লোকাল বা স্থানীয় ব্যথা।
২) রেফার্ড পেইন বা দূরে ছড়িয়ে যাওয়া ব্যাথা।

ঘাড় ব্যথার কারণ

ঘাড় ব্যথার অনেকগুলি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • মাংসপেশীর টান বা আঘাত: দীর্ঘ সময় ধরে একই অবস্থানে থাকা, ভারী জিনিস বহন করা, বা খারাপ ভঙ্গি ঘাড়ের পেশী টান বা আঘাতের কারণ হতে পারে।
  • আর্থারাইটিস: স্পাইনাল আর্থারাইটিস, যেমন অস্টিওআর্থারাইটিস এবং রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস, ঘাড় ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • ডিস্ক herniation: স্পাইনের ডিস্ক herniation হলে, নার্ভের উপর চাপ পড়ে ঘাড় ব্যথা হতে পারে।
  • ফাইব্রোমায়ালজিয়া: ফাইব্রোমায়ালজিয়া হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা সিনড্রোম যা ঘাড় ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • মেনিনজাইটিস: মেনিনজাইটিস হলো মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের আবরণীতে প্রদাহ, যা ঘাড় ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • ক্যান্সার: কিছু ক্ষেত্রে, ঘাড় ব্যথা হাড়, মেরুদণ্ড, বা অন্যান্য টিস্যুতে ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

ঘাড় ব্যথার উপসর্গ

  • ঘাড়ব্যথা এবং এই ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে
  • কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব
  • বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে
  • সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে (স্টিফনেস) আছে এবং আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে
  • ঘাড়ের মুভমেন্ট ও দাঁড়ানো অবস্থায় কাজ করলে ব্যথা বেড়ে যায়।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা:

ঘাড়ব্যথার চিকিৎসা দেয়ার আগে ফিজিক্যাল/ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন করা সাপেক্ষে সঠিক কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করতে হতে পারে। যেমন- এক্সরে, এম আর আই, সিবিসি, ইউরিক এসিড, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, সুগার, আর এফ টি ইত্যাদি।

ঘাড় ব্যথার চিকিৎসা

ঘাড়ব্যথার চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে। আপনার ডাক্তার আপনার ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, বা অন্যান্য চিকিৎসার সুপারিশ করতে পারেন। তবে চিকিৎসার মূল লক্ষ হলো ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ নিরাময় করা এবং ঘাড়ের মুভমেন্ট স্বাভাবিক করা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কনজার্ভেটিভ চিকিৎসা নির্দেশিত। বিশেষ ক্ষেত্রে সার্জারি প্রয়োজন হয়।

কনজারভেটিভ চিকিৎসা:

১.অ্যান্টিইনফ্লামেওটরি, মাসল রিলাক্সেন্ট ওষুধ সেবন এবং নিউট্রিয়েশনাল সাপ্লিমেন্টারী।
২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা আর এটিই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি।

বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যথা/সমস্যার কারণগুলোর উপর নির্ভর করে। এখানে বিভিন্ন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ এবং বিভিন্ন ধরনের থেরাপিউটিক মডালিটিস, ইলেকট্রোমেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট; যেমন- ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রো-ওয়েভ ডায়াথারমি,আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন, আইস, ময়েস্ট হিট, ওয়াক্স, লেজার, ড্রাই নিডলিং, ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক নার্ভ স্টুমুলেটর, ডিকম্প্রেসন, ট্যাপিং ইত্যাদি।

ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধ

ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধের জন্য আপনি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন, যেমন:

  • ভালো ভঙ্গি বজায় রাখুন (চালিয়ে যান): কম্পিউটার ব্যবহার করার সময়, দীর্ঘ সময় ধরে একই অবস্থানে বসে থাকা এড়িয়ে চলুন। একবারে ২০-৩০ মিনিট পরপর উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটুন বা কিছু হালকা ব্যায়াম করুন। আপনি যখন দাঁড়িয়ে থাকেন বা চলাফেরা করেন, তখন আপনার মাথা সোজা রাখুন এবং কাঁধ ঝুঁকে না রাখুন।
  • শরীর সুস্থ রাখুন:  আপনার পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে এবং ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে। আপনি যদি ধূমপান করেন, তাহলে তা ছেড়ে দেওয়া উচিত। ধূমপান আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালনকে বাধাগ্রস্ত করে, যা ঘাড় ব্যথার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • মানসিক চাপ কমান: মানসিক চাপ ঘাড়ের পেশীকে টান দেয় এবং ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। যোগ, মেডিটেশান, বা গভীর শ্বাস নেওয়ার মতো কৌশলগুলি আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ঘাড় ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি সাধারণত গুরুতর হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ঘাড়ের ব্যথা বাড়ির উপচার বা সহজ চিকিৎসার দ্বারা ঠিক হয়ে যায়। যদি আপনার ঘাড় ব্যথা তীব্র হয় বা কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী থাকে তবে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত।

মনে রাখবেন: এই লেখা টি শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে এবং কোনো চিকিৎসা পরামর্শ নয়। আপনার ঘাড়ের ব্যথার কারণ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করার জন্য সর্বদা আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

Share the Post:

Related Posts

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার ফলে সৃষ্টি হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে

Read More