Search
Close this search box.

সিজারের পর কোমর ব্যাথা: কারণ ও করণীয়

সিজারিয়ান সেকশন, যা সাধারণত সিজার নামে পরিচিত, একটি সাধারণ অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়া যা জটিল প্রসবের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। সিজারিয়ানের পরে অনেক মায়েরা কোমর ব্যাথার সমস্যায় ভুগেন। এই ব্লগে আমরা সিজারের পর কোমর ব্যাথার কারণ, এর প্রতিকার এবং করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সিজারের পর কোমর ব্যাথার কারণ

সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার একটি বড় অস্ত্রোপচার এবং এর ফলে কোমরে ব্যাথা হওয়া সাধারণ একটি ঘটনা। এর বিভিন্ন কারণ হতে পারে:

১. এপিডিউরাল বা স্পাইনাল অ্যানেস্থেশিয়া

সিজারিয়ানের সময় এপিডিউরাল বা স্পাইনাল অ্যানেস্থেশিয়া ব্যবহার করা হয়, যা কোমরে ব্যাথার একটি প্রধান কারণ হতে পারে। এই অ্যানেস্থেশিয়া পদ্ধতিগুলি পিঠে সুঁচ প্রবেশ করিয়ে সম্পন্ন করা হয়, যা কোমরের মাংসপেশী এবং নার্ভে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

২. অস্ত্রোপচারের কারণে তন্তু এবং পেশী কাটা

সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারে পেট এবং কোমরের পেশী ও তন্তু কাটা হয়। এই কাটাকাটি সেরে উঠার সময় কোমরে ব্যাথা হতে পারে।

৩. শারীরিক চাপ এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি

গর্ভকালীন সময়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং সিজারিয়ানের পরে শিশুর যত্ন নেওয়ার শারীরিক চাপ কোমরে ব্যাথার কারণ হতে পারে।

সিজারের পর কোমর ব্যাথার প্রতিকার

সিজারিয়ানের পরে কোমর ব্যাথা কমাতে এবং সুস্থ হওয়ার জন্য কিছু কার্যকর প্রতিকার গ্রহণ করা যেতে পারে:

১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম

অস্ত্রোপচারের পরে শরীরের পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। কোমর ব্যাথা কমাতে এবং শরীরের সেরে উঠার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।

২. হালকা ব্যায়াম

ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। পায়ে হাটা, কোমরের হালকা স্ট্রেচিং এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম কোমরের ব্যাথা কমাতে সহায়ক।

৩. ওয়ার্ম কমপ্রেস

কোমরের ব্যাথা কমানোর জন্য গরম পানির থলি বা ওয়ার্ম কমপ্রেস ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি পেশী শিথিল করে এবং ব্যাথা কমায়।

৪. সঠিক ভঙ্গি

শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় এবং ঘরের কাজ করার সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা জরুরি। সঠিক ভঙ্গি কোমরের ব্যাথা কমাতে সহায়ক।

সিজারের পর কোমর ব্যাথার চিকিৎসা

যদি কোমর ব্যাথা বেশি হয় এবং উপরের প্রতিকারগুলি কাজ না করে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি যা গ্রহণ করা যেতে পারে:

১. পেইন রিলিফ মেডিসিন

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পেইন রিলিফ মেডিসিন গ্রহণ করা যেতে পারে। সাধারণত প্যারাসিটামল বা অন্যান্য ব্যাথানাশক ওষুধ ব্যবহৃত হয়।

২. ফিজিওথেরাপি

কোমরের ব্যাথা কমাতে ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকর পদ্ধতি। প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম এবং থেরাপি গ্রহণ করা উচিত।

৩. আকুপাংচার

আকুপাংচার একটি পুরানো চিকিৎসা পদ্ধতি যা পেশী শিথিল করে এবং ব্যাথা কমাতে সহায়ক।

কোমর ব্যাথা প্রতিরোধে করণীয়

কোমর ব্যাথা প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

১. শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখা

গর্ভকালীন সময় এবং প্রসবের পরে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখা জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ব্যাথা প্রতিরোধে সহায়ক।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্য

প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ কোমরের পেশী এবং হাড়কে শক্তিশালী করে। সঠিক পুষ্টি শরীরের সেরে উঠার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

৩. ভার উত্তোলনে সতর্কতা

শিশুকে কোলে নেওয়া বা ভার উত্তোলনের সময় সতর্ক থাকা জরুরি। ভার উত্তোলনের সময় হাঁটু মুড়ে এবং কোমর সোজা রেখে ভার উত্তোলন করা উচিত।

উপসংহার

সিজারের পর কোমর ব্যাথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর সঠিক প্রতিকার এবং প্রতিরোধের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম, ওয়ার্ম কমপ্রেস, এবং সঠিক ভঙ্গি কোমর ব্যাথা কমাতে সহায়ক। অতিরিক্ত ব্যাথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ কোমর ব্যাথা প্রতিরোধে সহায়ক। সিজারিয়ানের পর কোমর ব্যাথা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।

Share the Post:

Related Posts

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার ফলে সৃষ্টি হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে

Read More