Search
Close this search box.

ডায়াবেটিস রোগীকে কেন ফিজিওথেরাপিস্ট দেখানো গুরুত্বপূর্ন?

ডায়াবেটিস হল এমন একটা রোগ বা কন্ডিশন, যেটা হলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের (ব্লাড সুগার) পরিমান অতিরিক্ত পরিমানে বেড়ে যায়। গ্লুকোজ (ব্লাড সুগার) হল আমাদের শরীরে শক্তির প্রধান উৎস, আমাদের প্রতিদিনের খাবার থেকে আমরা এই গ্লুকোজ পেয়ে থাকি। ইনসুলিন হল একটা হরমোন, যা আমাদের শরীরের প্যানক্রিয়াস (অগ্ন্যাশয়) থেকে উৎপন্ন হয়। এই ইনসুলিনই গ্লুকোজকে ভেঙ্গে শক্তিতে রূপান্তর করে শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে পাঠায়।

ডায়বেটিস প্রধানত তিন ধরণের, যার মাঝে টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ই বেশি কমন।

১। টাইপ ১ ডায়াবেটিস যেকোন বয়সেই হতে পারে, তবে সাধারনত কম বয়স্ক মানুষ টাইপ-১ এ বেশি আক্রান্ত হয়। এই ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে খুব ই কম ইনসুলিন তৈরি হয় অথবা তৈরি হয়না। যখন শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে ব্যর্থ হয়, তখন শরীরে গ্লুকোজের পরিমান বাড়তে থাকে এবং এই গ্লুকোজ টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ধরনের রোগিরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারনত ইনসুলিন নিয়ে থাকে। টাইপ ১ ডায়াবেটিস  প্রতিরোধ করা যায়না।

২। টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারনত বেশি বয়স্ক মানুষের হয়ে থাকে এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পৃথিবীর ৯০ ভাগ মানুষ ই এই ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। এ ধরনের ডায়াবেটিসে সাধারনত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগিরা ঔষধ সেবন করে এবং খবারের পরিমান নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটা চাইলেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। অতিরিক্ত ওজনের জন্যই অধিকাংশ সময় টাইপ ২ ডায়বেটিস হয়ে থাকে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফিজিওথেরাপির কিছু সুবিধা হল:

  • ব্যথা কমানো: ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু ক্ষতি (নিউরোপ্যাথি), গেঁটেবাত, এবং পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া (কন্ট্রাকচার) হতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা ব্যথা কমানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন, যেমন ব্যায়াম, ইলেকট্রোথেরাপি, এবং ম্যানুয়াল থেরাপি।
  • শারীরিক কার্যকারিতা উন্নত করা: ডায়াবেটিসের কারণে হাঁটাচলা, দাঁড়ানো, এবং ভারসাম্য রক্ষা করতে সমস্যা হতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীদের শক্তি, নমনীয়তা, এবং ভারসাম্য উন্নত করতে সহায়তা করতে পারেন, যা তাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে সাহায্য করে।
  • আঘাতের ঝুঁকি কমানো: ডায়াবেটিসের কারণে পায়ে সংবেদনশীলতা কমে যেতে পারে, যার ফলে আঘাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীদের পায়ের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারেন এবং পায়ে আঘাত প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারেন।
  • রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ উন্নত করা: নিয়মিত ব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীদের জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর ব্যায়ামের রুটিন তৈরি করতে সহায়তা করতে পারেন।

ডায়াবেটিসে ফিজিওথেরাপিস্ট দেখানো কেন জরুরী?

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে অবশ্যই একজন ডায়াবেটোলজিস্ট দেখাবেন এবং গ্লুকোমিটারের সাহায্যে নিয়মিত ডায়াবেটিসের পরিমাণ দেখে নিবেন।

টাইপ ২ ডায়বেটিস প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জন্য খাবার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এক্সারসাইজ ই হল প্রধান মেডিসিন। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট একজন এক্সারসাইজ বিশেষজ্ঞও বটে। একমাত্র তিনিই পারেন সঠিক, নিরাপদ এবং কার্যকরী এক্সারসাইজ সাজেস্ট করতে। এছাড়া একজন ডায়বেটিস রোগী বিভিন্ন ধরনের অস্টিওআর্থাইটিস জনিত হাঁটু ব্যথা, কোমর ব্যথা, ডায়বেটিস নিউরোপ্যাথি সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যথায় ভুগে থাকে। যেসব রোগের জন্য ফিজিওথেরাপি ই  সেরা।  অনেক ডায়াবেটিস রোগীকে এম্পুটেশন করতে (পা কেটে ফেলা) হয়। পরবর্তীতে সঠিক পুনর্বাসনের জন্যেও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়।

Share the Post:

Related Posts

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার ফলে সৃষ্টি হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে

Read More