বাত ব্যথা, যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA) নামেও পরিচিত, একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনক রোগ যা শরীরের যেকোনো জয়েন্টকে আক্রান্ত করতে পারে। এটি সাধারণত হাত, পা, কব্জি, হাঁটু এবং গোড়ালিতে দেখা যায়। বাত ব্যথা তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব, শক্ততা এবং জয়েন্টে কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে।
বাত ব্যথার কারণ
বাত ব্যথার সঠিক কারণ এখনও অজানা, তবে ধারণা করা হয় যে এটি জিনগত এবং পরিবেশগত কারণগুলির সমন্বয়ের কারণে হয়।
বাত ব্যথার কিছু ঝুঁকির কারণ:
- বয়স: ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের বাত ব্যথার ঝুঁকি বেশি।
- লিঙ্গ: মহিলাদের বাত ব্যথার ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় বেশি।
- পারিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার পরিবারে বাত ব্যথার ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার ঝুঁকি বেশি।
- অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন আপনার জয়েন্টগুলিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা বাত ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
- আঘাত: জয়েন্টে আঘাত বাত ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
- সংক্রমণ: কিছু সংক্রমণ, যেমন গনোরিয়া এবং ক্লামাইডিয়া, বাত ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
বাত ব্যথার লক্ষণ
বাত ব্যথার লক্ষণগুলি জয়েন্টে প্রদাহের কারণে হয়।
কিছু সাধারণ লক্ষণ যেমন:
- ব্যথা
- ফোলাভাব
- শক্ততা
- কার্যকারিতা হ্রাস
- জয়েন্টে লালভাব
- জয়েন্টে গরম অনুভূতি
এগুলো থাকলে বুঝতে হবে আপনার বাতের ব্যাথা আছে।
বাত ব্যাথার প্রতিকার
বাত ব্যথার কোন নির্দিষ্ট নিরাময় নেই, তবে চিকিৎসা লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং জয়েন্টের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
চিকিৎসার কিছু বিকল্প:
- ওষুধ: অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ (NSAIDs), ডিমার্ড রিউমাটয়েড ড্রাগস (DMARDs), এবং জৈবিক ওষুধগুলি বাত ব্যথার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- ফিজিওথেরাপি: ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে ব্যথা কমাতে এবং আপনার জয়েন্টের গতিশীলতা এবং শক্তি উন্নত করতে ব্যায়াম শিখতে সাহায্য করতে পারে।
- অস্ত্রোপচার: যদি অন্যান্য চিকিৎসা ব্যর্থ হয়, তাহলে জয়েন্টের ক্ষতি মেরামত করার জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
বাত ব্যথার নিরাময় না থাকলেও, কয়েকটি পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি এটির সাথে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। যেমন:
- চিকিৎসকের নির্দেশাবলী মেনে চলুন: নির্ধারিত ওষুধ নিয়মিত সেবন করুন এবং আপনার চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করুন।
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: অতিরিক্ত ওজন জয়েন্টগুলোতে চাপ সৃষ্টি করে ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখুন।
- শারীরিক কার্যকলাপ চালিয়ে যান: নিয়মিত, হালকা ব্যায়ামের মধ্যে থাকুন। হাঁটা, সাঁতার, সাইক্লিং বা যোগাসন আপনার জয়েন্টগুলোকে নমনীয় রাখতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, ব্যথা বৃদ্ধি পেলে বিশ্রাম নিন।
- গরম ও ঠান্ডা চিকিৎসা ব্যবহার করুন: একটি গরম সেঁক বা গরম স্নান শক্ত জয়েন্টগুলোকে শিথিল করতে এবং ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। অন্যদিকে, ফোলাভাব কমাতে আইস প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে।
- আপনার ঘুমের দিকে মনোযোগ দিন: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের পুনর্জীবনে সাহায্য করে। রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের চেষ্টা করুন।
- মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন: মানসিক চাপ বাত ব্যথার লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে দিতে পারে। ধ্যান, গভীর শ্বাস, যোগাসন ইত্যাদির মতো কৌশলগুলি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- সহায়ক ডিভাইস ব্যবহার করুন: হাঁটাচলা বা দৈনন্দিন কাজগুলো সহজ করতে লাঠি, ব্রেস বা অন্যান্য সহায়ক ডিভাইস ব্যবহার করা যেতে পারে।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন ?
- আপনার ব্যথা যদি ওষুধেও কম না হয়।
- আপনার জয়েন্টগুলোতে ফোলা বা লালভাব বৃদ্ধি পায়।
- আপনি জয়েন্টে জ্বালা বা কড়মড়ানি অনুভব করেন।
- আপনি দৈনন্দিন কাজগুলো সঞ্চালনে সমস্যা অনুভব করেন।
পরিশেষে
বাত ব্যথা একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলেও, সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটির সাথে সুস্থ ও সক্রিয় জীবনযাপন সম্ভব। তাই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন থাকুন, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন এবং সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখুন।