ডিস্ক প্রলাপ্স, যা হার্নিয়েটেড ডিস্ক নামেও পরিচিত, এটি একটি বেদনাদায়ক অবস্থা যেখানে মেরুদণ্ডের একটি ডিস্ক তার বাইরের আবরণের মধ্য দিয়ে ছিঁড়ে যায়। এটি কোমর, ঘাড় বা মেরুদণ্ডের অন্য কোন অংশে ব্যথা, দুর্বলতা এবং অবশতা সৃষ্টি করতে পারে।
ডিস্ক প্রলাপ্সের কারণ
ডিস্ক প্রলাপ্সের কারণ গুলো নিচে দেয়া হলোঃ
- বয়স: বয়সের সাথে সাথে, ডিস্কগুলি তাদের জলের অংশ হারিয়ে শুষ্ক এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়।
- ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
- ভারী বস্তু তোলা: ভুলভাবে ভারী বস্তু তোলা ডিস্কের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- আঘাত: গাড়ি দুর্ঘটনা বা পতনের মতো আঘাত ডিস্ক প্রলাপস হতে পারে।
- জিনগত কারণ: কিছু লোকের ডিস্ক প্রলাপ্সের ঝুঁকি বেশি থাকে।
ডিস্ক প্রলাপ্সের লক্ষণ
ডিস্ক প্রলাপ্সের লক্ষণ গুলো নিচে দেয়া হলোঃ
- ব্যথা: ব্যথা তীব্র হতে পারে এবং এটি তীক্ষ্ণ, ছুরিকাঘাতের মতো বা জ্বলন্ত হতে পারে। এটি প্রায়শই কাশি বা হাঁচির সাথে খারাপ হয়।
- দুর্বলতা: প্রভাবিত এলাকায় দুর্বলতা অনুভব করা যেতে পারে।
- অবশতা: প্রভাবিত এলাকায় অবশতা বা পিন এবং সূঁচের মত অনুভব করা যেতে পারে।
- মূত্রাশয় বা অন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস: গুরুতর ক্ষেত্রে, ডিস্ক প্রলাপ্স মূত্রাশয় বা অন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে।
ডিস্ক প্রলাপ্সের চিকিৎসা
- বিশ্রাম: ব্যথা কমাতে এবং আরও ক্ষতি রোধ করতে বিশ্রাম গুরুত্বপূর্ণ।
- ওষুধ: ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে ওভার-দ্য-কাউন্টার বা প্রেসক্রিপশন ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ফিজিওথেরাপি: ফিজিওথেরাপিস্ট ব্যথা কমাতে এবং শক্তি এবং নমনীয়তা উন্নত করতে ব্যায়াম শেখাতে পারেন।
- স্টেরয়েড ইনজেকশন: স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে পারে।
ডিস্ক প্রলাপ্স প্রতিরোধ
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- ভারী বস্তু তোলার সময় সঠিক ফর্ম ব্যবহার করুন।
- ধূমপান ত্যাগ করুন।
- সুষম খাদ্য খান।
ডিস্ক প্রলাপ্স: জীবনযাপনের পরিবর্তন এবং সতর্কতা
ডিস্ক প্রলাপ্স নির্ণয় হওয়ার পরেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব। ব্যথা কমানো এবং পুনঃপ্রলাপ প্রতিরোধে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন।
- শারীরিক অবস্থান: দীর্ঘ সময় ধরে একই অবস্থানে, বিশেষ করে বসে থাকা এড়িয়ে চলুন। প্রতি 20-30 মিনিটে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটুন বা কিছুটা শরীর চালিয়ে নিন।
- ঘুমের অবস্থা: পিঠে শোয়া সবচেয়ে ভালো। পা দীর্ঘ থাকলে বালিশ দিয়ে হাঁটু ভাঁজ করুন। পেটের ওপর না শোওয়াই ভালো।
- মানসিক চাপ: মানসিক চাপ ডিস্কের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। যোগ, মেডিটেশন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- ধূমপান: ধূমপান মেরুদণ্ডের টিস্যুতে রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয়, যা আরোগ্যকর ডিস্ক টিস্যু বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। তাই ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন ?
- যদি আপনার ব্যথা ওষুধে কম না হয়।
- আপনি যদি পায়ের দুর্বলতা, অবশতা বা মূত্রাশয় বা অন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ হারানো অনুভব করেন।
- আপনি যদি জ্বালাপোড়া, পিন বা সূঁচের মতো অনুভূতি অনুভব করেন।