Search
Close this search box.

সায়াটিকা কি এবং কেন হয় ?

আপনি কি কোমরের নিচের অংশে ব্যথা অনুভব করছেন? এই ব্যথা কি আপনার উরু ধরে পায়ের আঙুল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে? যদি তাই হলে, আপনি সম্ভবত সায়াটিকায় ভুগছেন। বাংলাদেশে চল্লিশ শতাংশ মানুষের জীবনে কোন না কোন সময় সায়াটিকা হয়, তাই এটি একটি সাধারণ সমস্যা। কিন্তু চিন্তা করবেন না, সঠিক চিকিৎসায় সায়াটিকা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।

সায়াটিকা কি?

আমাদের শরীরে সবচেয়ে বড় স্নায়ু হলো সায়াটিকা। এটি কোমরের নিচের অংশ থেকে উরু ধরে পায়ের আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত। যখন এই স্নায়ুতে কোনো কারণে চাপ পড়ে বা ক্ষতি হয়, তখনই সায়াটিকা নামক ব্যথা দেখা দেয়। এই ব্যথা সাধারণত তীব্র, জ্বালা করা এবং এক পাশে অনুভূত হয়।

সায়াটিকা কেন হয়?

সায়াটিকার অনেক কারণ হতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলো হলো:

  • হার্নিয়েটেড ডিস্ক: মেরুদণ্ডের কশেরুকার মাঝখানে যে নরম তরলপূর্ণ থলি থাকে, তা বাইরে বেরিয়ে গেলে সায়াটিকা স্নায়ুতে চাপ পড়ে ব্যথা হয়।
  • স্পাইনাল স্টেনোসিস: মেরুদণ্ডের খাল সংকুচিত হয়ে গেলে স্নায়ুর ওপর চাপ পড়ে ব্যথা হয়।
  • পিরিফরমিস সিনড্রোম: পিরিফরমিস নামক পেশীটি সায়াটিকা স্নায়ুর ওপর চাপ দিলে ব্যথা হয়।
  • গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় শিশুর ওজনের কারণে সায়াটিকা স্নায়ুতে চাপ পড়তে পারে।

সায়াটিকার লক্ষণ গুলো কি কি

সায়াটিকার প্রধান লক্ষণ হলো কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়া ব্যথা। এই ব্যথা সাধারণত তীব্র, জ্বালা করা এবং এক পাশে অনুভূত হয়। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • কোমরে ব্যথা
  • উরুতে ব্যথা
  • পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ ভাব
  • পায়ের দুর্বলতা
  • হাঁটতে বা বসতে অসুবিধা

সায়াটিকার নির্ণয়

সায়াটিকা নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক আপনার লক্ষণ, চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজন হলে এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের মতো ইমেজিং পরীক্ষাও করানো হতে পারে।

সায়াটিকার চিকিৎসা

সায়াটিকার চিকিৎসা সাধারণত ঘরেই করা যায়। চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো ব্যথা কমানো এবং স্নায়ুতে চাপ কমানো। আপনি নিম্নলিখিত চিকিৎসা গুলো নিতে পারেন,

১। ঘরোয়া চিকিৎসা

  • বিশ্রাম: ব্যথা কমাতে প্রথম কয়েক দিন বিশ্রাম নিন। তবে সম্পূর্ণ বিছানায় না থেকে হালকা হাঁটাচলা করুন।
  • ঠান্ডা ও গরম সেঁক: ব্যথার জায়গায় দিনে কয়েকবার 15-20 মিনিট করে ঠান্ডা সেঁক দিন। এরপর 15-20 মিনিট গরম সেঁক দিন।
  • ব্যথানাশক ঔষধ: চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করুন।
  • স্ট্রেচিং ব্যায়াম: হালকা স্ট্রেচিং ব্যায়াম স্নায়ুর চাপ কমাতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে কোনো ব্যায়াম শুরুর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

২। ফিজিওথেরাপি

ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে ব্যথা কমানোর জন্য বিশেষ ব্যায়াম করতে দিতে পারেন। এই ব্যায়ামগুলো আপনার মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়াবে এবং স্নায়ুর ওপর চাপ কমাবে।

৩। অস্ত্রোপচার

খুব কম ক্ষেত্রেই সায়াটিকার জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। তবে হার্নিয়েটেড ডিস্কের মতো গুরুতর সমস্য থাকলে অস্ত্রোপচার করা হতে পারে।

সায়াটিকা প্রতিরোধ

  • সুস্থ ও সবল পিঠের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  • সঠিক পদ্ধতিতে ভারী জিনিসপত্র তুলুন ও বহন করুন।
  • দীর্ঘসময় বসে থাকলে মাঝে মাঝে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন।
  • সুষ্পষ্ট ও সঠিক আসনে বসুন।
  • স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খান।
  • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

  • যদি আপনার ব্যথা খুব তীব্র হয় বা কয়েক সপ্তাহেও কম না যায়।
  • যদি আপনার পায়ে দুর্বলতা অনুভব করেন।
  • যদি আপনার পায়ের কোনো অংশে অবশ ভাব হয়।
  • যদি আপনার মল-ত্যাগ বা মূত্রত্যাগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়।

পরিশেষে

সায়াটিকা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও তা অসহনীয় ব্যথা দিতে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা ও নিজের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে সহজেই সায়াটিকা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

Share the Post:

Related Posts

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার ফলে সৃষ্টি হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে

Read More