Search
Close this search box.

পারকিনসন রোগ

পারকিনসন রোগ হল একটি স্নায়বিক রোগ যা ধীরে ধীরে শরীরের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এই রোগে মস্তিষ্কের সাবস্ট্যানশিয়া নাইগ্রা নামক অংশে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের পরিমাণ কমে যায়। ডোপামিন হল একটি রাসায়নিক পদার্থ যা শরীরের নড়াচড়া, ভারসাম্য এবং পেশীর নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডোপামিনের ঘাটতির ফলে শরীরের নড়াচড়া ধীর হয়ে যায়, কাঁপুনি হয়, পেশী শক্ত হয়ে যায় এবং ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

পারকিনসন রোগের কারণ

পারকিনসন রোগের সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে, গবেষকরা মনে করেন যে, জিনগত এবং পরিবেশগত উভয় কারণেই এই রোগ হতে পারে। জিনগত কারণের মধ্যে রয়েছে পারিবারিক পারকিনসন রোগ, যা পারিবারিক পারকিনসন সিনড্রোম নামেও পরিচিত। পরিবেশগত কারণের মধ্যে রয়েছে কিছু কীটনাশক, রাসায়নিক পদার্থ এবং পারমাণবিক বিকিরণ।

পারকিনসন রোগের লক্ষণ

পারকিনসন রোগের লক্ষণগুলি সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে খারাপ হতে থাকে। এই রোগের প্রধান লক্ষণগুলি হল:

  • কাঁপুনি: সাধারণত হাত, বাহু, পা বা মুখের কাঁপুনি হয়।
  • ধীর গতির নড়াচড়া: হাঁটা, লেখার গতি ইত্যাদি ধীর হয়ে যায়।
  • পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া: শরীরের বিভিন্ন অংশের পেশী শক্ত হয়ে যায়।
  • ভারসাম্যহীনতা: হাঁটার সময় ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
  • কথা বলার সমস্যা: কথা বলার সময় শব্দ স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে কষ্ট হয়।
  • মুখের অভিব্যক্তি কমে যাওয়া: মুখের অভিব্যক্তি কমে যায়, ফলে মুখের অঙ্গভঙ্গি অস্পষ্ট হয়ে পড়ে।
  • ঘুমের সমস্যা: ঘুমের সমস্যা হতে পারে, যেমন ঘুমের অভাব, ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া ইত্যাদি।

পারকিনসন রোগের চিকিৎসা

পারকিনসন রোগের চিকিৎসার লক্ষ্য হল লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা এবং রোগের অগ্রগতি ধীর করা। এই রোগের চিকিৎসায় সাধারণত ওষুধপত্র, শারীরিক থেরাপি এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

ওষুধপত্র

পারকিনসন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রধান ওষুধগুলি হল ডোপামিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (ডিআরটি)। এই ধরনের ওষুধগুলি মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা বাড়ায়। ডিআরটি-এর মধ্যে রয়েছে লেভোডোপা, কারবিডোপা, অ্যামান্টেডিন, ব্রোমোক্রিপটাইন এবং রোপিনিরোল।

শারীরিক থেরাপি

পারকিনসন রোগের চিকিৎসায় শারীরিক থেরাপিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শারীরিক থেরাপির মাধ্যমে রোগীকে নড়াচড়ার দক্ষতা উন্নত করা, পেশী শক্তি বৃদ্ধি করা এবং ভারসাম্য রক্ষা করা শেখানো হয়।

অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি

পারকিনসন রোগের চিকিৎসায় অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন গভীর মস্তিষ্ক উদ্দীপনা (ডিবিএস), সাবস্ট্যান্সিয়া নাইগ্রা গ্রাফ্টিং ইত্যাদিও ব্যবহার করা যেতে পারে।

পারকিনসন রোগের প্রতিরোধ

পারকিনসন রোগের প্রতিরোধে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ:

  • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে পারকিনসন রোগের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
  • কীটনাশক ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন: কীটনাশক ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শ এড়িয়ে চললে পারকিনসন রোগের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

পারকিনসন রোগের জটিলতা

পারকিনসন রোগের দীর্ঘস্থায়ী হলে নিম্নলিখিত জটিলতা দেখা দিতে পারে:

  • ঘুমের সমস্যা: ঘুমের সমস্যা, যেমন ঘুম না আসা বা ঘুমের মধ্যে ঘুম থেকে ওঠার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: উদ্বেগ, বিষণ্নতা, এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা
Share the Post:

Related Posts

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার ফলে সৃষ্টি হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে

Read More