Search
Close this search box.

ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাজ কি

ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাজ কি


ফিজিওথেরাপিস্টরা শারীরিক ব্যায়াম, ম্যাসাজ, ওজন প্রশিক্ষণ এবং থেরাপি সরঞ্জাম ব্যবহার করে লোকেদের শারীরিক কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। তারা বিভিন্ন ধরণের শারীরিক অবস্থার চিকিৎসা করে, যার মধ্যে রয়েছে:

  1. আঘাত
  2. ব্যথা
  3. পক্ষাঘাত
  4. আর্থ্রাইটিস
  5. পোড়া
  6. অস্ত্রোপচারের পরে পুনর্বাসন

ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীর মূল্যায়ন করে এবং তাদের নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তাগুলি নির্ধারণ করে। তারপর তারা একটি ব্যক্তিগতকৃত চিকিত্সা পরিকল্পনা তৈরি করে যা রোগীর লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে সহায়তা করবে।

আগেকার দিনে মানুষ সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার অভাবে মারা যেত, কষ্ট পেত কিংবা পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম একটি শাখা আবিষ্কারের ফলে মানুষ পঙ্গুত্ব বা সেই কষ্টকে অনেকটাই জয় করেছে। সেই সঙ্গে কাটাচ্ছে বাত ব্যথা ও প্যারালাইসিসমুক্ত সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব। আর সেই শাখাটির নাম- ফিজিওথেরাপি। এটি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ও স্বতন্ত্র চিকিৎসা ব্যবস্থা, যেখানে সব ধরনের বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিসসহ প্রতিবন্ধী এবং প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি বা রোগীকে বিভিন্ন পরীক্ষণ, নিরীক্ষণ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রয়োগসহ উপদেশ ও ব্যবস্থাপত্র প্রদানের মাধ্যমে সব ধরনের শারীরিক সমস্যার সমাধান ও প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় বিভিন্ন ভৌত উপাদান, থেরাপিউটিক পন্থা বা এক্সারসাইজ, ফার্মাকোথেরাপি, দৈনন্দিন কার্যক্রম সহায়ক সামগ্রী ও গবেষণালব্ধ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীকে চিকিৎসা ও রিহ্যাবিলিটেশন সেবা প্রদান করা হয়। ১৯৬০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পেশা আত্মপ্রকাশ করে। ঐ বছর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় প্রতিবন্ধী শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য প্রথম ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও স্নাতকোত্তর অর্থোপেডিকস কোর্সের সঙ্গে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে স্নাতক কোর্স চালু হয়।

এখন বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন ফর দ্য প্যারালাইজড (CRP), হ্যান্ডিক্যাপ বাংলাদেশ, বিভিন্ন পুনর্বাসন প্রকল্প, স্পোর্টস দল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শারীরিক শিক্ষার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজের সুযোগ আছে ফিজিওথেরাপিস্টদের। বাংলাদেশে স্নাতক ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপিস্টের সংখ্যা প্রায় ১৮০০, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইন্সটিটিউট থেকে ফিজিওথেরাপিতে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের ৩৩ ভাগই কাজ করেন সিআরপিতে। শতকরা ১৪ ভাগ কর্মরত আছেন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য এনজিওতে। শতকরা ১৬ ভাগ বিদেশে কাজ করেন বা পিএইচডিতে অধ্যয়নরত। বাকিরা বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছেন (সূত্রঃ দৈনিক শিক্ষা, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭)।

শরীরের নড়াচড়া সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসা দেন –

  1. বাত
  2. ব্যথা
  3. হাড় ক্ষয়জনিত রোগ
  4. আর্থ্রাইটিস
  5. মাংসপেশীর দুর্বলতা
  6. প্যারালাইসিস
  7. নার্ভ ইনজুরি
  8. শারীরিক প্রতিবন্ধিতা
  9. বিকলাঙ্গতা
  10. সাধারণ ইনজুরি
  11. স্পোর্টস ইনজুরি

একজন ফিজিওথেরাপিস্টের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে –

  1. রোগীর বর্ণনাসাপেক্ষে ও শারীরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা;
  2. রোগীর চিকিৎসায় ম্যানুয়াল থেরাপি, ম্যানিপিউলেটিভ থেরাপি, মুভমেন্ট উইদ মোবিলাইজেশন, হাইড্রোথেরাপিসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা;
  3. প্রয়োজনে ইনফ্রা রেড রে (IRR) বা ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক্যাল নার্ভ সিমুলেশনের (TENS) মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে ইলেকট্রোথেরাপি দেয়া;
  4. রোগীর স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়ামের পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয়া।

ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীদেরকে ঔষধ প্রেসক্রাইব করতে পারলেও বাংলাদেশে কোন ফিজিওথেরাপিস্ট কাউন্সিল না থাকায় এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই।

যেহেতু ফিজিওথেরাপি অন্য যেকোনো চিকিৎসার মতো, তাই পুনর্বাসনকারী ফিজিও দলের যোগ্যতা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ধরণের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য যোগ্যতা ফিজিওথেরাপিস্ট নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যায়াম, গরম এবং ঠান্ডা প্যাক, হাইড্রোথেরাপি থেকে শুরু করে ম্যানিপুলেশন পর্যন্ত, ফিজিও গতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করার জন্য এই চিকিৎসাগুলির যে কোনও একটি বেছে নেয়া যায়।

ফিজিওথেরাপিস্ট হতে হলে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিওথেরাপিতে স্নাতক ডিগ্রি নিতে হবে। ফিজিওথেরাপিতে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা পরিচিত কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিস্ট নামে। অন্যদিকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের বলা হয় ফিজিওথেরাপি স্পেশালিস্ট।

উন্নত বিশ্বে ফিজিওথেরাপিস্ট অন্যতম পছন্দের পেশা হলেও বাংলাদেশে এ পেশা এখনো অনেক চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় আছে। বাংলাদেশ সরকার এখন প্রতিবন্ধী ও পক্ষাঘাতগ্রস্থ ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করায় ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য সরকারি চাকরির সুযোগ বেড়েছে।

ফিজিওথেরাপির যথেষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতা থাকলে আন্তর্জাতিক এনজিওতে উচ্চপর্যায়ে কাজ করা সম্ভব। এছাড়া, ফুটবল, হকি, ভলিবলসহ অন্যান্য জাতীয় দলে ফিজিও কনসালট্যান্টের কাজ করে গড়ে তোলা সম্ভব আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিজিওথেরাপি বিভাগের শিক্ষক কিংবা শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুযোগ আছে।

একটা বিষয় সবসময় মনে রাখা দরকার। এ পেশা বহুলোক সরাসরি জনস্বাস্থ্যের সাথে জড়িত। জ্ঞান-দক্ষতা আর আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাঁচতে হবে  জীবন পারেন বহু মানুষের ।

Share the Post:

Related Posts

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার ফলে সৃষ্টি হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে

Read More